কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ হামলা, প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ২৪ জন পর্যটক

 

কাল্পনিক ছবি

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন শহর পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। হামলার ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটিকেই কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য হিমালয়ঘেরা পেহেলগাম, যেটিকে অনেকেই 'ভারতের সুইজারল্যান্ড' বলেন, সেখানেই হঠাৎ গুলির শব্দে ত্রস্ত হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই হামলাকে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় বেসামরিক হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক, যারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৬ জন পর্যন্ত হতে পারে। তাঁদের মধ্যে দুজন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন—একজন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অপরজন নেপালের। ভারতীয় নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাও নিহতদের মধ্যে আছেন বলে দ্য হিন্দু জানিয়েছে।

ঘটনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এই হামলা ভারতের দৃঢ় সংকল্পকে আরো শক্তিশালী করবে। এর পরপরই তিনি সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফেরেন। কাশ্মীরে পৌঁছান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও, যিনি শ্রীনগরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন।

জম্মু ও কাশ্মীরে পেহেলগামের কাছে বন্দুকধারীদের হামলায় আহত হন এই নারী। মঙ্গলবার কাশ্মীরের অনন্তনাগের একটি হাসপাতালে |
ছবি: রয়টার্স


কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা জানান, হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পুরো এলাকা নিরাপত্তা চাদরে মোড়ানো।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে এই দাবির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, "কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। ভারতের পাশে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে আছে।"

এই হামলা ঘটে এমন সময়, যখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত সফরে রয়েছেন। তিনি তাঁর টুইটারে লিখেছেন, "এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকাহত পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল।"

ঘটনাটি বৈসারন নামের একটি পাহাড়ি এলাকায় সংঘটিত হয়, যা পেহেলগাম শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। পুলিশ জানায়, যেখানে হামলা হয়েছে সেখানে সড়কপথে গাড়ি পৌঁছানো সম্ভব নয়।

এক প্রত্যক্ষদর্শী গুজরাটি পর্যটক বলেন, “হঠাৎ করে গুলির শব্দে সবাই ভয় পেয়ে দৌড়াতে শুরু করেন, চারদিকে কান্না আর আতঙ্ক।”

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, সেনারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাচ্ছেন। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যায়, রাস্তায় নিথর দেহ পড়ে আছে, লোকজন সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। যদিও এসব ভিডিওর সত্যতা এখনো যাচাই হয়নি।

আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, আর পুরো অঞ্চল ঘিরে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তা চৌকিতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। হামলাকারীদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে।

উল্লেখ্য, কাশ্মীরে ১৯৯০-এর দশক থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে। পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান বহু বছর ধরে কাশ্মীরকে নিজেদের দাবি করে আসছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ এবং সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে।

বর্তমানে কাশ্মীরে প্রায় পাঁচ লাখ ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে। ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকারের সিদ্ধান্তে কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা হয়।

এর আগে ২০২৪ সালের জুনে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলায় ৯ জন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হন। আর ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলায় ৪৬ জন ভারতীয় জওয়ান প্রাণ হারান, যার জবাবে ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়।

0 মন্তব্যসমূহ